বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:২৯ পূর্বাহ্ন
ক্রাইমসিন ডেক্সঃ
৭ দফা দাবিতে সংবাদ সম্মেলন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে ব্রজমোহন (বিএম) কলেজ
শিক্ষার্থীরা। গতকাল বেলা ১২ টায় পরিবহন পুলের সামনে সংবাদ সম্মেলন ও একই দাবিতে
বিকেল সাড়ে ৪ টায় মসজিদ গেটে বিক্ষোভ মিছিল করে শিক্ষার্থীরা।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা ঘটনার সূত্রপাত সম্পর্কে বলেন, একজন গরিব বাসচালকের কাছে
একটি ঘটনার প্রেক্ষিতে ৬০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করা হয় এবং তাকে জিম্মি করে ৪০
হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে আরও ২০ হাজার টাকা আদায়কালে দুজন
চাঁদাবাজ বটতলা এলাকায় এলাকাবাসীর হাতে আটক হন।
এলাকাবাসীর অনুরোধে সাধারণ
শিক্ষার্থীরা উপস্থিত হয়ে চাঁদাবাজদের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। পরে ঘটনাক্রমে জানা যায়,
চাঁদাবাজ দুজন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিষয়টি বিবেচনা না করে এবং দুুজন চাঁদাবাজের পক্ষ নিয়ে রাত ১২টায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসযোগে একদল শিক্ষার্থী এসে বটতলায় সাধারণ শিক্ষার্থী এবং পুলিশ
ফাঁড়িতে হামলা চালায়।
তখন বরিশালের সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানমাল রক্ষার্থে জনসাধারণকে
সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধ করে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কেস স্টাডি
না করেই নিজেদের বিশ্ববিদ্যালয়ের চাঁদাবাজ শিক্ষার্থী দুজনের পক্ষে দেশীয় অস্ত্র এবং
ট্রাকভর্তি ইট-পাথর নিয়ে বিএম কলেজে হামলা চালায়।
এই হামলায় বিএম কলেজের শিক্ষার্থী এবং সহযোগিতায় এগিয়ে আসা অন্যান্য কলেজের শিক্ষার্থীরা গুরুতর আহত হন। এসময়
সন্ত্রাসীরা বিএম কলেজের পরিবহণ পুলের সব বাস, ড্রাইভারদের রুম, মুসলিম হল, হিন্দুু হল
এবং মহাত্মা অশ্বীনি কুমার ছাত্রাবাসসহ বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে ভাংচুুর করে।
এসব অভিযোগ এনে বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা ৭ দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হল- বাস
নিয়ে আসা হামলাকারী, বটতলায় চাঁদাবাজকারী, এর পেছনে মদতদাতা এবং উসকানি প্রদান
করা সবার সুষ্ঠু বিচার করা; মধ্যরাতে বিএম কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর অতর্কিত হামলার
ফলে যেসব শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন তাদের সম্পূর্ণ চিকিৎসার ব্যয়ভার বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
প্রশাসনকে গ্রহণ করা; বিএম কলেজসহ সকল সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা
এবং কোনো সাধারণ শিক্ষার্থীকে কোনোরূপ হয়রানি না করা; বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের
শিক্ষার্থীরা বরিশাল শহরে কোনো ধরনের অরাজকতা যাতে সৃষ্টি করতে না পারে সেই বিষয়ে
যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা; কলেজ, সব হোস্টেল এবং সাধারণ মানুষের বাসাবাড়ি, দোকানপাট
ভাংচুুর এবং লুটপাটের ঘটনার সম্পূর্ণ ক্ষতিপূরণ দেয়া; হামলায় জড়িত সব সন্ত্রাসীকে
অতিদ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা এবং ভবিষ্যতে আর কোনো
সাধারণ শিক্ষার্থীর ওপর হামলা হলে এর দায়ভার বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়কেই নিতে হবে।
এসময় সংবাদ সম্মেলন থেকে ১২ ঘন্টার দাবি বাস্তবায়নের আল্টিমেটাম দেয় শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি
বাস্তবায়ন না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেয়।
এদিকে একই দাবিতে বিকেল সাড়ে ৪ টায় বিক্ষোভ মিছিল করে সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজ শিক্ষার্থীরা।
অপরদিকে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিকেল সাড়ে ৫ টায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের
সংবাদ সম্মেলন করার কথা থাকলেও সংবাদ সম্মেলনটি করেনি শিক্ষার্থীরা।
তাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, সংবাদ সম্মেলনের পরবর্তী সময় জানিয়ে দেয়া হবে।
তবে অতর্কিত হামলা এবং ধ্বংসাত্মক কর্মকাÐের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার কলেজ
কর্যক্রম বন্ধ রেখে বেলা ১১ টায় বিক্ষোভ ও মানববন্ধনের আয়োজন করেছে সরকারি বিএম
(ব্রজমোহন) কলেজ কর্তৃপক্ষ।
অপরদিকে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বরিশাল
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবার শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একইসাথে
বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানানো হয় তারা যেন শান্ত এবং
সচেতন থাকে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সহযোগিতা করে।
উল্লেখ্য, সরকারি ব্রজমোহন কলেজে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৩০ সহস্রাধিক এবং বরিশাল
বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ১২ সহস্রের মত।
রাতে ক্যাম্পাসে ঢুকে হামলার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ
করেছেন বরিশালের সাধারণ মানুষ। তাদের আশংকা এই ঘটনা আরও অনেক দূর গড়াবে।